টেকসই
খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কর্মসৃজন সহ কৃষক এবং
শ্রমিকদের
অধিকার
ও জীবিকা সুরক্ষার জন্য সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান
আজ
১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন ও জাতীয় কিষাণি
শ্রমিক সমিতি আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য দিবসের আলোচনায় বক্তারা কৃষি খাতকে সবচেয়ে অগ্রাধীকারযোগ্য খাত হিসেবে বিবেচনা করে কৃষিখাতে সব ধরনের উপকরণ
এর সহলভ্যতা, উৎপাদন প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ, বিনাসুদে
কৃষি ঋণ প্রদানসহ কৃষকের
উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির সকল কার্যক্রম চালু রাখা, একই সঙ্গে কৃষকের ন্যায্য মূল্য পাওয়া, কৃষি পণ্য সরবরাহ চেইন ঠিক রাখা, এবং প্রান্তিক কৃষক এবং খামার শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, জীবিকার সুরক্ষা, পরিবেশগত সুরক্ষা ও জলবায়ু কর্মোদ্যোগ আহ্বান জানিয়েছেন।
সভায়
প্রধান অতিথি হিসাবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন “বিএনপি-র সাইফুর রহমান
চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভাতের বদলে কপি খেতে বলেছিলেন, এক ত্রগারোর জেনারেল
মঈনুদ্দিন ভাতের বদলে আলু খেতে বলেছিলেন, এখন কপির দাম মানুষের নাগালের বাইরে, আর চাল আর
আলুর দাম সমান সমান। সুতরাং ভাতের বদলে
কপি খাবে, অথবা আলু খাবে তার উপায় নাই। চালের দামের উর্ধগতির কারণে থালায় ভাতের পরিমাণ যেমন কমেছে, তেমনি আলুর দাম বেঁড়ে যাওয়ায় মরিচ দিয়ে আলু ভর্তা দিয়ে পেট তারও উপায় নাই। বাজার সিন্ডিকেট এতই প্রবল যে সরকার চালের
দাম, আলুর দাম বেধে দিলেও তাতে থোরাই কেয়ার করছে তারা। এই অবস্থায় বাজার
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাড়া মানুষের আর কোন উপায়
নাই। আর সরকারকে এখানে
মজুতবিরোধী আইন, ভোক্তা অধিকার আইনের কঠোর প্রয়োগে এগিয়ে আসতে হবে।”
মেনন
খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে বলেন, গুদামে- মিলে চাল থাকলেই চলবে না। সেই চালে মানুষের অধিগম্যতা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে
হবে। বাংলাদেশে উদ্বৃত্ত চাল আছে কিন্তু দাম বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় দেশে
খাদ্য নিরাপত্তা ঝুকির মুখে। যে কোন বিপর্যয়কর
পরিস্থিতিতে খাদ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পরবে।
বাংলাদেশ
কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক। আলোচনায় আরো অংশ নেন আইইউএফ এশিয়া/প্যাসিফিক এর ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর নাসরিন সুলতানা, জাতীয় কিষাণি শ্রমিক সমিতির সভাপতি লিলা খানম, কোষ্ট ট্রাস্ট এর ডেপুটি ডিরেক্টর,
মোঃ মুজিবুল হক মুনির, নেসলে এমপ্লইজ ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান এবং মোঃ মামুন হোসেন সহ কৃষি ফার্ম
শ্রমিকদের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ।
মাহমুদুল
হাসান মানিক বলেন, ‘আমরা যখন বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করছি বাংলাদেশ তখন ভয়াবহ খাদ্য সংকটের দিকে যাচ্ছে। কভিড-১৯ কালে বাংলাদেশের
মানুষকে খাওয়ার ব্যবস্থা করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যারা পালন করেছে সেই কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ আজ নিজেদের খাবার
খেতে পারছে না। যেই ফার্ম শ্রমিকরা গবেষনার কাজে সহযোগিতার কারনে কৃষিতে অনেক মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে, আজ সেই ফার্ম
শ্রমিকদের অস্থায়ী শ্রমিকে পরিনত করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা এর তিব্র প্রতিবাদ
করি।’ তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আজকে সবচেয়ে হুমকি হ’ল ব্যবসায়ী
সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে খাদ্য থাকা সত্তে¡ও এই সিন্ডিকেট
চক্রান্ত করে দেশকে খাদ্য সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে’।
নাসরিন
সুলতানা বলেন, ‘কভিড-১৯ এর ক্রমবর্ধমান
সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে, বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থায় আধিপত্য বিস্তারকারী বিশ্বব্যাপী কৃষি-খাদ্য কর্পোরেশনগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পুনরুদ্ধার করতে এবং তাদের লাভ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। তারা যার ভিত্তিতে ব্যবস্থাটি পুনরুদ্ধার করতে চায় তা হ’ল
উচ্চ মূল্যের ব্র্যান্ড এবং পণ্য; স্বল্প আয় এবং গ্রামীণ
দারিদ্র্য; উচ্চ উৎপাদনশীলতা এবং বিষাক্ত কীটনাশক; অস্থিতিশীল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কৃষি এবং পরিবেশ ধ্বংস যা কৃষি শ্রমিক,
প্রান্তিক কৃষক এবং তাদের সম্প্রদায়কে “দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি করে।
জাতিসংঘের
পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদন এর বিষয় উল্লেখ
করে জনাব নাসরিন আরো বলেন, ‘আমরা যেভাবে কৃষি উৎপাদন করি এবং বিশ্বকে খাওয়াই তা যদি পরিবর্তন
না করি তবে আমরা পরবর্তী মহামারিটিও তৈরি করব যা করোনাভাইরাস সৃষ্ট
কভিড-১৯ জাতীয় রোগের
উত্থান এবং বিস্তারকে বৃদ্ধি করবে। পরবর্তী মহামারি প্রতিরোধ করতে এবং বৈশ্বিক খাদ্য সংকট প্রতিরোধ করতে আমাদের অবশ্যই বিদ্যমান বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থাকে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে এবং খাদ্য সুরক্ষা ও পুষ্টির সার্বজনীন
অধিকার থেকে শুরু করে সামাজিক সুরক্ষা এবং ব্যাপক অধিক অধিকার-ভিত্তিক, পরিবেশগত টেকসই বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
জাতীয়
কিষাণি শ্রমিক সমিতির সভাপতি লিলা খানম বলেন, ‘খাদ্য সংকট মোকাবেলা করার জন্য সরকারের ব্যপক ভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা নিতে হবে এবং এই কর্মপরিকল্পনার একটা
গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কৃষক, কৃষি শ্রমিক, নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।এদেরকে বাদ দিয়ে, এদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, কর্মসংস্থানের
সুরক্ষা না করে, তাদের
জীবিকা সুরক্ষা না করে, তাদের
স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, খাদ্য
ব্যবস্থা কোন ভাবেই টেকসই করা সম্ভব নয়। সুতরাং সরকারকে গ্রামীণ কর্মসংস্থান তৈরি এবং কৃষি খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং নারীর প্রতি সহিসংসতা বন্ধ করা ও কৃষক হিসেবে
নারীর স্বীকৃতি এবং ভূমির উপর তার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
জনাব
মোঃ মুজিবুল হক মুনির বলেন,
‘খাদ্য সংসম্পূর্ণতা অর্থবহ করতে হলে অবশ্যই কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রমিকদের কাজের নিশ্চয়তাসহ ন্যায্য মজুরি প্রদান করতে হবে।’