Wednesday, December 18, 2019

বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন ও জাতীয় কিষাণি শ্রমিক সমিতির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালন

অভিবাসীকর্মীরাও অবশ্যই সম্মান ও নিরাপত্তা আশা করে

১৮ ডিসম্বের, ২০১৯। আজ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিউট (ব্রি) তে অনুষ্ঠিত এক সামবেশে অভিবাসী কর্র্মীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন ও জাতীয় কিষাণি শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে উল্লেখ করা হয়যে,  ৪ ডিসেম্বর ২০০০ তারিখে গৃহীত জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে অভিবাসীকর্মীদের নিজেদের দেশের ও কর্শরত দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি প্রদান এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

সমাবেশে গোলাম ছরোয়ার বলেন, অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশিদের অবস্থান ষষ্ঠ। ২০১৯ সালের এক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ৭৮ লাখ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাস করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই জীবিকার তাগিদে শ্রমিক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্থায়ীভাবে অভিবাসন নিয়েছেন। আবার কেউ উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে স্থায়ী অভিবাসী হয়েছেন। তিন দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে । এভাবেই বছরের পর বছর এ দেশের লাখ লাখ মানুষ জীবিকার তাগিদে ও ভালো থাকার আকাংখায় দেশান্তর হয়েছেন।

মামুন হোসেন বলেন,  বাংলাদেশিরাই শুধু অভিবাসী হন না, বাংলাদেশেও বিদেশিরা আসেন। মিয়ানমার থেকে বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে বসবাস করছে। জাতিসংঘের হিসাবে, এমন শরণার্থীর সংখ্যা এখন ৯ লাখ ৩২ হাজার। নব্বইয়ের দশকে এই সংখ্যা এক লাখের কম ছিল। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে আছে। শীর্ষে আছে পাকিস্তান। পাকিস্তানে প্রায় ১৪ লাখ শরণার্থী আছে।

নুরজাহান বেগম বলেন,  আমাদের অভিবাসীকর্মীরা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিকেই চাঙ্গা করে রাখছে না, কর্মরত দেশগুলোর অর্থনীতিতেও মূল্যবান অবদান রেখে যাচ্ছে। আমাদের এই কর্মীদের ঘামের ওপরই ওই দেশগুলোর উন্নয়ন ঘটছে। তারাই ওই দেশগুলোর মানুষের জীবনযাত্রাকে করেছে সহজতর ও আরামদায়ক। তাদের ছাড়া ওই সব দেশ একটুও এগোতে পারে না। কিন্তু বিনিময়ে এই অভিবাসীকর্মীরা কি আদৌ কোনো সম্মান পাচ্ছে? মানব ব্যবসায়ী ও নিয়োগকর্তাদের শোষণ আর নিপীড়ন ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটে না। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয় লোভী দালালদের মাধ্যমে যাওয়া এবং অবৈধভাবে কমরত অভিবাসীরা। অন্যদিকে আমাদের নারী কর্মীরা হচ্ছে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার।

সমাবেশের সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, বাংলাদেশি অভিবাসীকর্মীদের ৮০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং মালয়েশিয়ায় কাজ করছে। ওই সব দেশে অভিবাসীকর্মীদের অধিকার রক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের অধিকার সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন বা অবহেলা করা হয়। অভিবাসীদের অধিকার ক্ষুণœ করা সত্তে¡ও ওই সব দেশের প্রশাসনের বদান্যতায় নিয়োগকর্তারা রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিবাসীদের অধিকারসংক্রান্ত  কোনো আন্তর্জাতিক কনভেনশনের তোয়াক্কা করে না ওই সব দেশের মানুষ। এ ছাড়া স্থানীয় আদালত সে দেশের লোকজনকেই সমর্থন করে থাকেন। অর্থাৎ অভিবাসীকর্মীরা ন্যায়বিচার পায় না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে অভিবাসীকর্মীরাও আমাদের মতোই মানুষ। তারা অবশ্যই সম্মান ও নিরাপত্তা আশা করে।



No comments:

Post a Comment