Friday, April 17, 2020


কভিড-১৯ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ খামার ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কৃষি শ্রমিকদের জন্য

মজুরী প্রণোদনা ও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের জন্য মূলধন প্রণোদনা দিতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ এবং জাতীয় কিষাণি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রীমা আক্তার এক যৌথ বিবৃতিতে করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্থ খামার ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কৃষি শ্রমিকদের জন্য মজুরী প্রণোদনা এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের জন্য মূলধন প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয় বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রথম আঘাতটা এসেছে শ্রমজীবী মানুষের উপর। দেশব্যপী লকডাউন, গণপরিবহন চলাচল বন্ধকরে দেওয়া এবং জরুরী নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা কৃষি শ্রমিকসহ অসংগঠিত খাতের সকল শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আয়, জীবন-জীবিকা, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হুমকি স্বরূপ। সকল ধরনের খামারে, প্লান্টেশনে এবং অসংগঠিত খাতে কাজ করা শ্রমিকেরা প্রয়োজনীয় জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।  প্রায় ২ কোটি নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের অবস্থা শোচনীয় পর্যায় চলে এসেছে।

শ্রমিকদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকরা করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কৃষকরা সবজি, ডিম ও দুধের মতো পচনশীল পণ্য চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজারে পৌঁছাতে পারছে না। ফলে মূলধন হারিয়ে চরম দূর্গতির মুখোমুখি হওয়া বেশিরভাগ কৃষক আগামী দিনগুলোতে উৎপাদন করতে পারবেন না।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখাটা জরুরি। তাই স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনকে উৎসাহিত ও সহায়তা করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি চাষীদের মূলধন যোগাতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষনাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে জরুরী খাত বিবেচনায় কৃষির জন্য এই প্রণোদনা সুদমুক্ত করা এবং এর পরিধি বাড়ানো জরুরী প্রয়োজন ও যুক্তিসংগত। একই সঙ্গে কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেন না থাকে সেটি নিশ্চিত করে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় খাদ্যের সার্বোভৌত্ব ও সকলের খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করা জন্য একটি সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।

যেহেতু কৃষি শ্রমিক খাদ্য সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য, তাই বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন কৃষি শ্রমিক এবং তাদের পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে নিম্ন লিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

১. রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায় কর্মহীন, অসুস্থতা বা সেলফ আইসোলেশনে থাকার মতো কভিড-১৯ দ্বারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ খামার, অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষিকাজে নিয়োজিত সকল শ্রমিকদের তিন মাসের আপৎকালীন মজুরী সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করা।

২. কৃষি শ্রমিকরা যে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা প্রদান করে তার স্বীকৃতিস্বরূপ অবিলম্বে তাদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করতে হবে এবং তাদেরকে ঝুঁকিভাতা প্রদান করতে হবে।

৩. প্রাতিষ্ঠানিক খামারে যাতায়াতের জন্য নিয়োগকর্তা কর্তৃক পরিবহন সরবরাহ করতে হবে এবং সরবরাহকৃত পরিবহণগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে এবং যানবাহনগুলি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং পরিবহন শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. আসন্ন ধানকাটা মৌসুমে শ্রমিকদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিবহন সরবরাহ করতে হবে এবং সরবরাহকৃত পরিবহণগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে এবং যানবাহনগুলি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৫. কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সবসময় অবশ্যই পর্যাপ্ত পানীয় জল, স্যানিটেশন সুবিধা, প্রয়োজনীয় সমস্ত সুরক্ষামূলক পোশাক এবং জীবানুনাশক ব্যাবস্থার সুবিধা থাকতে হবে।

৬. অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের ন্যায় কৃষি শ্রমিকদেরও সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য বীমার স্কিম-এ অন্তভর্ক্ত করতে হবে।

৭. নারী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে: বিশেষত তাদের আয় এবং সামাজিক সুরক্ষা, প্রসূতি সুরক্ষা, প্রসবোত্তর যত্ন, যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম এবং যৌন হয়রানির হাত থেকে সুরক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

৮.ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক, পোলট্রি ও দুগ্ধ খামারিদের মুলধন প্রণোদনা প্যাকেজের অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।     
 
৯. করোনাভাইরাস এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষী, অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি কাজ করেন এমন ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের তালিকা তৈরী করে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং রেশনের ব্যবস্থা করা। এদেরকেও প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ন্তভূক্ত করা এবং বিনা সুদে মূলধন যোগান দেওয়া।

১০. জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি শ্রমিক সংগঠনের সহায়তায় গ্রামীণ অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করতে হবে এবং জরুরী ত্রাণ সরবরাহ করতে হবে।

১১. ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীরা যেহেতু উৎপাদিত ফসল বিক্রয় করতে না পারায় যেহেতু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং তাদের নগদ টাকার অভাব রয়েছে। সুতরাং এদেরকে আপৎকালীন নগদ টাকা সহায়তা দেওয়া এবং বিনা সুদে মূলধন যোগান দেওয়া।

১২. ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কৃষি ঋন মওকুফ করা।



No comments:

Post a Comment